Skip to main content
 

আমাদের কথা

শরীয়তপুর জেলা আদালতের ইতিহাস

 

শরীয়তপুর জেলার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

প্রশাসনিক সুবিধার্থে মাদারীপুরের বৃহৎ পূর্বাঞ্চল নিয়ে একটি পৃথক মহকুমা গঠনের প্রয়াস ১৯১২ সাল হতেই নেয়া হয়েছিল। কিন্তু স্বাধীনতার পর ১৯৭৬ সালে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় মাদারীপুরের পূর্বঞ্চল নিয়ে একটি নতুন মহকুমা গঠিত হবে। এ বিষয়ে নির্বাচনী কমিটির সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে বিশিষ্ট সমাজ সংস্কারক, বৃটিশ বিরোধী তথা ফরায়েজী আন্দোলনের নেতা হাজী শরীয়ত উল্লাহর নামানুসারে এর নাম করণ হয় শরীয়তপুর এবং এর সদর দপ্তরের জন্য পালং থানা অঞ্চলকে বেছে নেয়া হয়। ১৯৭৭ সালের ১০ ই আগস্ট রেডিওতে সরকার কর্তৃক মহকুমা গঠনের ঘোষণা দেয়া হয় এবং ঐ বছরের ৩রা নভেম্বর এ মহকুমার আনুষ্ঠানিক শুভ উদ্বোধন করেন তৎকালীন উপদেষ্টা জনাব আবদুল মোমেন খান। এর পর রাষ্ট্রপতি হুসেইন মোঃ এরশাদ সরকারের প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাসের ফলে শরীয়তপুর মহকুমাকে জেলায় রূপান্তর করা হয়। ৭ই মার্চ ১৯৮৩ সালে জেলা গঠনের ঘোষণা হয়। ১৯৮৪ সালের ১লা মার্চ শরীয়তপুর জেলার শুভ উদ্বোধন করেন তৎকালীন তথ্য মন্ত্রী জনাব নাজিম উদ্দিন হাশিম।

 

শরীয়তপুর চিকন্দী চৌকি আদালতের ইতিহাস

বাংলাদেশে বর্তমানে যে বিচার ব্যবস্থা তা সম্পূর্ণ ব্রিটিশ শাসন ব্যবস্থার উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে। ভারতবর্ষে ব্রিটিশ শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তনের পূর্বে এদেশে ছিল সুলতানী ও মোঘল আমলে গড়ে ওঠা বিচার ব্যবস্থা। মোঘল সম্রাট হুমায়নকে যুদ্ধে পরাজিত করে শেরশাহ  ভারতবর্ষে যে রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেন তা অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য (১৫৪০-১৫৪৫) হলেও গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক ও বিচারিক সংস্কারের জন্য তিনি স্মরণীয় হয়ে আছেন। তিনি ভারতের ইতিহাসে প্রথম বারের মত দেওয়ানী ও ফৌজদারী মামলা নিষ্পত্তির জন্য প্রাথমিক স্তরে আলাদা আদালত প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি প্রতিটি পরগণা শহরে একজন দেওয়ানী জজ নিযুক্ত করেন যাদের মুন্সেফ বলা হতো। মুন্সেফ দেওয়ানী বিচার বিভাগের প্রধান ছিলেন। বর্তমান শরীয়তপুর জেলা বৃহত্তর ফরিদপুর জেলার একটি সমৃদ্ধ জনপদ ছিল। বর্তমান শরীয়তপুর বৃহত্তর ফরিদপুর জেলার পালং থানা হিসাবে যখন পরিচিত ছিল তখন সেই ১৯০১ সালে এর আয়তন ছিল ৩০৮ বর্গ মাইল। যেখানে ৫৫৫টি গ্রাম ছিল এবং জনসংখ্যা ছিল ২৯৫৮১৯ জন। ফরিদপুরের ইতিহাস প্রণেতা শ্রী আনন্দনাথ রায় তার গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন মুলফৎগঞ্জ (পোড়াগাছা) এলাকায় বহু পূর্ব হতে একটা মুন্সেফী অফিস ছিল। তিনি আরো উল্লেখ করেন ১৮৫৪ সালে পোড়াগাছাতে জনৈক নিত্যানন্দ গাঙ্গুলী মুন্সেফ এর দায়িত্ব পালন করেন। ১৮৬৬ সালে মুলফৎগঞ্জ ঢাকা জেলার মুন্সীগঞ্জ হতে পৃথক হয়ে মাদারীপুর মহকুমাভূক্ত হয়। কিন্তু মুলফৎগঞ্জ এর পোড়াগাছা নদী সিকস্তি হওয়ায় তৎকালীন মুন্সেফ রমেশচন্দ্র লাহিড়ী প্রথমে জপসাতে তার দপ্তর ও কর্মচারীসহ বসতেন। পরবর্তিতে চিকন্দি গ্রামের নিকটবর্তী সুন্দীপ নামক স্থানে আদালত স্থাপনের পূর্ব পর্যন্ত আদালতের কার্যক্রম ডোমসার গ্রামের বিশিষ্ট আইনজীবী শ্রী বিশ্বেশ্বর দাশের বাড়িতে সম্পন্ন হত। বিশ্বেশ্বর দাশ বরিশাল জজ আদালতের প্রসিদ্ধ আইনজীবী ছিলেন। রাসবিহারী ঘোষ মুলফৎগঞ্জ মুন্সেফীতে ২৩ অক্টোবর ১৮৭৬ সালে নিয়োগ পান। যোগেন্দ্র নাথ বিএল মুলফৎগঞ্জ মুন্সেফীতে যোগদান করেন ৬ ফেব্রুয়ারী ১৮৭৫ সালে। ১৮৮২ সালে মুলফৎগঞ্জ মুন্সেফীতে ২ জন মুন্সেফ ছিল, যোগেন্দ্র নাথ দাশ এবং প্রাণ কৃষ্ন বিশ্বাস। প্রাণ কৃষ্ন বিশ্বাস নিয়োগ পান ফোর্থ গ্রেড হিসাবে পরে ২৪ এপ্রিল ১৮৮৫ তিনি থার্ড গ্রেডে উন্নীত হন। পরবর্তিতে ইতিহাসে থেকে দেখা যায় রাজা নারায়ণ চক্রর্তী চিকন্দী মুন্সেফী আদালতে যোগদান করেন ৯ নভেম্বর ১৮৮৫। এই ৬ সময়ের মধ্যে  কোন এক সময় চিকন্দী নামক স্থানে মুন্সেফী আদালত স্থানন্তরিত হয়।

 

বর্তমান চিকন্দী আদালত ভবনটির স্থাপত্য বৈশিষ্ট পর্যালোচনা করলে তা ব্রিটিশ আমলের স্থাপত্যরীতির আদলে নির্মিত মর্মে চিহ্নিত করা যায়। ১৯২৫-১৯২৬ সালে নির্মিত হয় মর্মে বিভিন্ন রিপোর্ট থেকে ধারনা করা যায়। তৎকালীন চিকন্দী মুন্সেফীর অধীনে ৩ জন মুন্সেফ ছিলেন। চিকন্দী মুন্সেফীর এখতিয়ার ছিল পালং এবং শিবচর এলাকায়। ঐ সময় ডামুড্যাতে অনারারি ম্যাজিস্ট্রেট এর একটি বেঞ্চ ছিল। বর্তমানে দেশের চৌকি আদালতগুলির মধ্যে চিকন্দী আদালত সবচেয়ে পুরাতন চৌকি আদালত এবং একমাত্র আদালত যেখানে চৌকিতে সদর সিনিয়র সহকারী জজ আদালত অবস্থিত। দেশের অন্য কোন সদর সিনিয়র সহকারী জজ আদালত চৌকিতে অবস্থিত নয়। চিকন্দি আদালত ভবনটি ১১.৫০ একর ভূমির উপর অবস্থিত। চিকন্দি আদালত চত্বরে ১৫০ বছরের অধিক পুরাতন একটি শিমুল ও একটি বটগাছ, শতবর্ষী ২টি পুকুর ও অতিপুরাতন একটি মসজিদ আছে। বর্তমানে ব্রিটিশ আমলে নির্মিত ভবনে চিকন্দি আদালতে শরীয়তপুর সদর থানা ও জাজিরা থানার সহকারী জজ আদালতের কার্যক্রম পরিচালিত হয়। বর্তমানে শরীয়তপুর জেলার অপর সকল আদালতের কার্যক্রম জেলা হেড কোয়ার্টারে অবস্থিত।

শরীয়তপুর জেলা আদালতের ইতিহাস

১৯৭৭ সনের ১০ আগষ্ট বাংলাদেশ বেতারে শরীয়তপুর মহকুমা স্থাপনের ঘোষণা দেয়া হয়। ০৩ নভেম্বর তৎকালীন সরকারের উপদেষ্টা জনাব আব্দুল মোমেন খাঁন নতুন মহকুমা শরীয়তপুর এর উদ্বোধন করেন। ০৩ নভেম্বর ১৯৭৭ সনে জনাব আমিনুর রহমানকে মহকুমা প্রশাসক ও জনাব আব্দুর রউফকে পুলিশ সুপারের নিয়ন্ত্রণে মহকুমার কার্যক্রম আরম্ভ হয়। পালং তুলাসার গুরুদাস উচ্চ বিদ্যালয় রোডে অবস্থিত শরীয়তপুর পাবলিক লাইব্রেরীর পূর্ব প্রকোষ্ঠকে মহকুমা প্রশাসকের কার্যালয় ও পশ্চিম প্রকোষ্ঠকে যথা পাঠকক্ষকে এজলাস তৈরী করে বিচারিক কার্যক্রম আরম্ভ হয়। তখন ফৌজদারী বিচার করতেন এস.ডি.ও তথা মহকুমা প্রশাসক।

এখানে ছিল একটি প্রাচীন বেল গাছ এজন্য লোকজন বলত বেলতলার কোর্ট। সাধারণ বিচার এবং সাক্ষ্য গ্রহণ করতেন মহকুমা  প্রশাসক সুলতান আহম্মেদ নামে একজন বিচারক। বর্তমানে উপজেলা সভাকক্ষটি সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য এজলাস হিসেবে ব্যবহার করতেন। শরীয়তপুর তখন কোন আইনজীবী ছিল না। মাদারীপুর হতে জনাব আফতাব উদ্দিন দেওয়ান, সুলতান হোসেন মিয়া, ইয়াছিন সরকার, আমির আলী বাঘা, এম.এ ওয়াদুদ, জয়নাল আবেদিন, আব্দুর রাজ্জাক শিকদার, কালীপদ ঘটক, আবুল হাসেন , এম.এম আলী আহম্মদ, আলী আহম্মদ খাঁন, আনোয়ার হোসেন ও আঃ ছালাম।

১৯৮৩ সনে আদালতের কার্যক্রম পাবলিক লাইব্রেরী হতে বর্তমান স্থানে স্থানান্তরিত করা হয় যেটি মূলত মহকুমা প্রশাসকের অফিস ছিল।  বর্তমানে পিপি সাহেবের কার্যালয়টির পূর্ব পাশের কক্ষটি ছিল অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এর আদালত, আর বর্তমানে ভেদরগঞ্জ আদালতের এজলাস ছিল সাবডিভিশনাল ম্যাজিস্ট্রেট এর আদালত। বর্তমান জেলা প্রশাসক ভবনের জায়গাটি ছিল ফাঁকা মাঠ। উত্তর পাশের পুকুরের সংলগ্ন দক্ষিণ পাশে ছিল ১৭ বন্দের একটি চৌচালা টিনের ঘর যা আইনজীবী সমিতি রুপে ব্যবহৃত হতো। ওকালতনামা বিক্রয়ের জন্য জনাব আফতাব উদ্দিন দেওয়ানকে সভাপতি ও আব্দুর রাজ্জাক শিকদারকে সম্পাদক বানিয়ে আইনজীবী সমিতি গঠন করা হয়। হিসাব রক্ষণ অফিস ছিল বর্তমান নারী ও শিশু নির্যাতন আদালতের এজলাস ভবন। ১৯৮৪ সনে জেলা ঘোষণা হওয়ার পর বর্তমান জেলা প্রশাসকের ভবন তৈরীর ব্যবস্থা নেয়া হলে বর্তমান আইনজীবী সহকারী সমিতির ভবন স্থানে ২১ বন্দের চৌচালা টিনের ঘর তৈরী করে আইনজীবী সমিতি স্থানান্তরিত করা হয়। আইনজীবী সমিতির অফিস নির্মাণের জন্য প্রাক্তন এম.পি সরদার নাসিরউদ্দিন কালু ১০,০০০/- টাকা অনুদান দেন এবং জেলা প্রশাসক সাহেব দেন একটি বৃহৎ কড়ইগাছ। তখন প্রয়াত জনাব আব্দুর রাজ্জাক শিকদার সাহেব ছিলেন সভাপতি ও জনাব আবুল কাশেম মৃধা ছিলেন সাধারণ সম্পাদক। এডভোকেট জনাব আলী আহম্মদ খান কোষাধ্যক্ষ হিসাবে মনোনীত হন।

 ১৯৮৪ সনের মাঝামঝি সময়ে জেলা আইনজীবী সমিতি গঠন কল্পে একটি পূর্ণাঙ্গ গঠনতন্ত্র তৈরী করার নিমিত্ত জনাব আলী আহম্মদ খানকে আহবায়ক করে এবং জনাব আব্দুর রাজ্জাক শিকদার ও জনাব আবুল কাশেম মৃধাকে সদস্য করে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি সংবিধান প্রণয়ন কমিটি গঠন করা হয়। এই তিন জন প্রয়াত জনাব আব্দুর রাজ্জাক শিকদার সাহবের চেম্বারে বসে দিনের পর দিন, রাতের পর রাত পরিশ্রম করে জনাব আলী আহম্মদ খান সাহেবের অনুলিখনে একটি খসড়া সংবিধান তৈরী কাজ করেন যেটি ২৭/০১/১৯৮৫ ইং তারিখে সমাপ্ত হয়। তার ৪ দিন পর ১৯৮৫ সনের ১ ফেব্রুয়ারি বর্তমান শরীয়তপুর অফিসার্স ক্লাবে অনুষ্ঠিত এক সভায় সকল  আইনজীবীদের উপস্থিতিতে ২ টি পরিচ্ছদ, ৩৩ টি ধারা, ১ টি তফসিল ও ৪টি সংযোজিত ধারা বিশিষ্ট শরীয়তপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সংবিধান অনুমোদিত হয়। সভায় উপস্থিত ছিলেন জনাব সুলতান হোসেন মিয়া, প্রয়াত জনাব ইয়াছিন সরকার, প্রয়াত জনাব জয়নাল আবেদিন, প্রয়াত জনাব কালীপদ ঘটক, প্রয়াত জনাব আব্দুর রাজ্জাক শিকদার, প্রয়াত জনাব আবুল হাসেন, জনাব আলী আহম্মদ খান ও জনাব আফতাব উদ্দিন দেওয়ান প্রমুখ। জেলার প্রথম জেলা প্রশাসক নিয়োজিত হন রাঙ্গামাটি শহরের চাকমা পরিবারের জনাব চিত্তরঞ্জন চাকমা, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক নিয়োগ হন জনাব জহিরুল হক। জেলা হলেও জজ কোর্টের কোন বিচার ব্যবস্থা ছিল না। জেলা জজ কোর্টে বিচারের জন্য প্রতিদিন একটি নদী ও দীর্ঘপথ অতিক্রম করে বিচার প্রার্থী জনগণকে মাদারীপুরে যেতে হত। তখন সড়ক পথে যাতাওয়াতের কোন ব্যবস্থা ছিল না। আঙ্গারিয়া হতে লঞ্চ অথবা নৌকায় যেতে হত। মাদারীপুরের জেলা ও দায়রা জজ নিয়োজিত ছিলেন জনাব নাসির উদ্দিন আহম্মদ। এ্যাডভোকেট জনাব সুলতান হোসেন মিয়া, প্রয়াত জনাব আব্দুর রাজ্জাক শিকদার, জনাব আবুল কাশেম মৃধা ও জনাব আলী আহম্মদ খান এবং এড. সৈয়দ ফেরদৌস কবির সিদ্দিকীর পিতা জনাব মীর জাফরসহ মাদারীপুর ডাক বাংলোর দোতলায় গিয়ে বার বার গিয়ে, অনেক অনুনয় বিনয় করে শরীয়তপুরে সাব-জজ নিয়োগদানে ব্যবস্থা করা হয়। পরে ১৫/০৫/১৯৮৫ তারিখে নেত্রকোনার অধিবাসী জনাব সামসুল হাসান সাব-জজ হিসাবে যোগদান করে বিচার কার্য আরম্ভ করেন। তখন এ, পি, পি হিসেবে জনাব প্রয়াত আব্দুর রাজ্জাক শিকদার নিয়োগ পান। ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত চলে  এই ব্যবস্থা এবং জেলা ও দায়রা জজ এর বিচার কার্য মাদারীপুর জেলার সহিত সংযুক্ত করার খবরে অত্র জেলা  আইনজীবী সমিতির আইনজীবীগণ এজলাসে যাওয়া বন্ধ করে দেন। তারা ধর্মঘট করে অনেক লেখালেখির পর শেষ পর্যন্ত ১৯৮৯ সালের ১৩ জুন সকালে জানা যায় শরীয়তপুর জেলায় জেলা জজ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ১৪  জুন দোহার থানার জনাব এ.কে.এম ফজলুর রহমান খান জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে কিশোরগঞ্জ জেলা হতে শরীয়তপুরে আসেন। ঐদিন তাঁকে জেলা প্রশাসক সাহেবের কক্ষে পরচিতি ও আপ্যায়ন করা হয়। ১৫ জুন ১৯৮৯ রোজ বৃহস্পতিবার শরীয়তপুর জেলার প্রথম জজ হিসেবে বিচার কার্য শুরু করেন। ঐদিন তিনি এজলাসে উঠে সকলের সাথে কুশল বিনিময় করেন। জেলা জজ কোর্টের জন্য আলাদা কোন ভবন না থাকায় শরীয়তপুর পৌরসভার পুরাতন ভবনের উত্তর পাশের কক্ষটি জেলা জজ কোর্টের এজলাস হিসাবে ব্যবহার করা হয়। পরদিন ১৬ জুন জেলা জজ কোর্ট উদ্বোধনের তারিখ ঘোষণা করা হয়। উদ্বোধন করেন তৎকালীন উপরাষ্ট্রপতি জনাব এ.কে.এম নুরুল ইসলাম। জনাব আলী আহম্মদ খান এক রাতে মানপত্র লেখেন। তিনি সারা রাত জেগে তা লিখে অন্যান্য আইনজীবীদের শুনিয়ে চূড়ান্ত করেন। পরদিন ১৬ জুন ১৯৮৯ রোজ শুক্রবার শরীয়তপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালত উদ্বোধন করা হয়। রাষ্ট্রীয় অতিথিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সমাজ কল্যাণ মন্ত্রী জনাব টি.এম.গিয়াস উদ্দিন। ঐ বছর জনাব মুজাফ্ফর হোসেনকে পি.পি এবং আবুল কাশেম মৃধা ও জনাব জনাব আলী আহম্মদ খানকে এ.পি.পি নিয়োগ করা হয়। উদ্বোধনের পূর্বদিন এজলাসে বিচার কালীন সময়ে আইনজীবী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনাব সুলতান হোসেন মিয়া, প্রয়াত জনাব আব্দুর রাজ্জাক শিকদার, প্রয়াত জনাব জয়নাল আবেদিন, প্রয়াত জনাব ইয়াসিন সরকার, প্রয়াত জনাব হাসমত আলী খাঁ, জনাব হাতেম আলী মিয়া, জনাব আবুল কাশেম মৃধা, জনাব আলী আহম্মদ খানঁ, জনাব হাবিবুর রহমান ও পিপি জনাব মুজাফ্ফর হোসেন। প্রয়াত আইনজীবী জনাব ইয়াসিন সাহেবের একটি ফৌজদারী মোকদ্দমা প্রথমে ডাকা হয়। জেলা ও দায়রা জজ কোর্ট ভবন তৈরী হওয়ার পর ১৯৯৮ সনে বর্তমান ভবনে স্থানান্তরিত হয়। শরীয়তপুর জেলার প্রথম জেলা জজ জনাব এ.কে.এম ফজলুর রহমান খান ১৫/০৬/১৯৮৯ খ্রিঃ হতে থেকে ০৮/০৭/১৯৯০ খ্রিঃ পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। জনাব শেখ মফিজুর রহমান গত ২৭/০৪/২০২২ খ্রিঃ হতে জেলা জজ হিসাবে কর্মরত আছেন।

 

শরীয়তপুর আইনজীবী সমিতির ইতিহাস

আইনজীবী সমিতি ভবন বর্তমান স্থানে স্থানান্তরিত হয় ২০০৭ সনে। বিজ্ঞ আইনজীবী এবং তৎকালীন পানীসম্পদ মন্ত্রী প্রয়াত জনাব আব্দুল রাজ্জাক সাহেবের প্রচেষ্টায় এবং বাংলাদেশ সরকারের আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আর্থিক  সহযোগিতায় বর্তমান আইনজীবী ভবন নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হলে তৎকালনি পানিসম্পদ মন্ত্রী প্রয়াত জনাব আব্দুর রাজ্জাক ও আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী জনাব আঃ মতিন খসরু নতুন ভবন উদ্বোধন করেন।

চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতসহ অন্যান্য আদালতের কার্যক্রম শুরুর ইতিহাস

বিচার বিভাগ ভাগ হওয়ার পর  ২৫/১০/২০০৭ তারিখে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এর কার্যক্রম আরম্ভ হয় এবং চীফ জডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে জনাব শফিকুর রহমান সাহেব ১ম যোগদান করেন। অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ না থাকার কারণে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল, ফৌজদারী ও দেওয়ানী কার্যক্রম দীর্ঘদিন বিঘ্নিত হয়েছে। মামলা মোকদ্দমা অধিক হওয়ায় জেলা ও দায়রা জজের কার্যক্রম বিলম্ব হতো। অনেক প্রচেষ্টার পর বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ জনাব মোঃ মনির কামাল ১১/০৯/২০১৪ ইং তারিখে এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল এর বিচার কার্যক্রম এর জন্য বিজ্ঞ বিচারক জনাব রোখসানা পারভীন বিগত ২৭/০৩/১৪ ইং তারিখে যোগদান করেন।

জেলা জজ আদালত ভবনটি ০৩ একর জমির উপর অবস্থিত। এখানে ইংরেজি আই শেপের চারতলা একটি বিল্ডিংসহ জেলা প্রশাসকের অফিসে এবং টিন শেড নির্মিত ভবনে বিচারিক কার্যক্রম পরিচালত হচ্ছে। জেলা জজ আদালত ভবনের ঠিক পেছনে একটি মসজিদ, মসজিদ সংলগ্ন শান বাধানো ঘাটসহ বৃহৎ পুকুর, সামনে খোলা জায়গা এবং চারপাশ নারিকেল গাছসহ সবুজ গাছপালা জেলা জজ ভবনটিকে অনন্য করে রেখেছে। আদালত চত্বরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুর‌্যাল যোগ করেছে বিশেষ মাত্রা।

 

সম্পাদনায় ও সংকলনে: মোঃ ইলিয়াস রহমান, বিচারক (যুগ্ম জেলা জজ), ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল; মোঃ শামছুল আলম, সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট; জনাব হেদায়েত উল্যাহ, জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এবং হুমায়ূন কবির, জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, শরীয়তপুর।

বিশেষ কৃতজ্ঞতা: এনামুল কবির মিঠু, যুগ্ম জেলা জজ, পাবনা; এডভোকেট জনাব আলী আহম্মদ খান, সিনিয়র এডভোকেট, শরীয়তপুর আইনজীবী সমিতি